responsive img
সিদীপ শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি

শিক্ষা

সিদীপ-এর শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি (শিসক) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সলিমগঞ্জ শাখায় ১লা এপ্রিল, ২০০৫ সালে শুরু হয়। শুরুতে এই প্রোগ্রামটি নিরক্ষর ও দরিদ্র বাবা-মা’র সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ করার লক্ষ্যে শ্রেণিপাঠ প্রস্তুত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর পরপরই, এই প্রোগ্রামে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উদ্যোগের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষাও চালু করা হয়, যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইত্যাদি। ২০১৫ সালে শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবীণ সম্মাননা প্রদান যোগ করা হয়েছিল। এরপর শিশু শিক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী ‘প্রকৃতি পাঠ’ যোগ করা হয়েছে। এটি সিদীপের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক প্রয়াত মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল। এটি ২০১৬ সালে শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচিতে যুক্ত হয়।

সিদীপের ২২৬টি শাখার মধ্যে ১৫৯টি শাখায় শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। সিদীপের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ১৫৯ জন শিক্ষা সুপারভাইজার এবং ২,৯৭৬ জন শিক্ষিকা এই কর্মসূচিটি পরিচালনা করছেন। প্রতি মাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। ২০২৫ সালের মে মাসে ৬১,২৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে ৩২,৭৩৮ জন মেয়ে এবং ২৮,৫১২ জন ছেলে। সিদীপের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচিতে এখন আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষা সুপারভাইজাররা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ কর্মস্থল থেকে অনলাইন মাসিক প্রতিবেদন পাঠান। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা একে অপরের সাথে এবং সিদীপের প্রধান কার্যালয়ের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমেও যুক্ত থাকেন।

সিদীপ বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষাকে সহায়তা করে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধে শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকারা তাদের প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস-পাঠ প্রস্তুত করতে সহায়তা করেন। শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পাঠে সহায়তা করেন, তারা তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, সহপাঠ এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও অনুশীলন করানো হয়। প্রতি বছরের শেষ মাসে শিক্ষাকেন্দ্র সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপন করে করে।

প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে অভিভাবকদের একটি কমিটি থাকে। প্রতি মাসে তারা শিক্ষাকেন্দ্রটি সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য একসাথে সভা করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা তাদের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ অনুসারে শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করেন। শিক্ষিকারা তার শিক্ষাকেন্দ্রের শিশুদের প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রকৃতি-পাঠের ব্যবস্থা করেন।


আমরা এখানে

সিদীপ’র শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির উদ্দেশ্য

১.প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করা।

২.শিশুদের তাদের ক্লাসের পড়া প্রস্তুত করে দেওয়া, প্রতিদিন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করে নিজেদের যতœ নিতে অনুপ্রাণিত করা, প্রকৃতি-পাঠ অধ্যয়নে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সম্মান করে তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধি করা।

৩.সমাজের উন্নতির জন্য উদ্ভাবনী অনুশীলন বাস্তবায়ন করা।

আমাদের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির অবস্থা (৩১ মে, ২০২৫)

  • ১৫৯
  • ২৯৭৬
  • ২৯৭৫
  • ১৫৯
  • 28512
  • 32738
  • 61250
  • 250মোট ব্রাঞ্চ সংখ্যা

শিসক

শিসক ২০০৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সলিমগঞ্জ নামক একটি প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল নিরক্ষর এবং দরিদ্র বাবা-মার বাচ্চাদের টিউশন সেবা প্রদান করা, যেনো তারা পরের দিনের জন্য তাদের স্কুলের পড়া তৈরি করতে পারে। এখন পর্যন্ত আমরা ২,৯৭৬টি শিক্ষাকেন্দ্রে শিসক পরিচালনা করছি। এর উদ্ভাবনী পদ্ধতি এবং ব্যাপক সাফল্যের কারণে চকঝঋ-এর ২৫০ টিরও বেশি অংশীদার সংস্থা এবং অঝঅ আমাদের শিক্ষাকেন্দ্রের কাঠামো অনুসরণ করে একই ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। শিসক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির জন্য রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

২০০৫ সালে, আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে মাত্র ৫টি শিক্ষাকেন্দ্র (খঈ) দিয়ে এই কার্যক্রমটি শুরু করেছিলাম। শুরু থেকেই, আমরা শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হল স্কুলের প্রচলিত পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা এবং পরের দিনের ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে এবং তাদের ফলাফল ভালো করতেও জোরালো ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয় শিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত কোন গৃহবধু, মা বা কলেজের ছাত্রী যারা শিশু থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের পাঠদানে সক্ষম তাদের মাধ্যমে শিক্ষাকেন্দ্রগুলা পরিচালিত হয়। গ্রামের যেকোনো বাড়িতে শিশু, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির ২০-২৫ জন দরিদ্র শিশুকে একত্রিত করে একটি শিক্ষাকেন্দ্র শুরু করার জন্য এবং তাদের প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে পড়ানোর জন্য আমরা প্রতি মাসে ৯০০ টাকা সম্মানী প্রদান করে থাকি। তিনি প্রতি মাসে আমাদের সম্মানী ভাতার পাশাপাশি, প্রতি শিশু থেকে ৫০-১০০ টাকা করে সংগ্রহ করেন। 

কিন্তু অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিনামূল্যে পাঠদান করে থাকেন।

এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। এই কার্যক্রমটি চমৎকার কাজ করেছে। শিশুরা কেবল বিকেলে ২ ঘন্টার বর্ধিত ক্লাসে যোগদানই করেনি, বরং নিজেদের ভালোর জন্য ক্লাসের উপস্থিতিও বাড়িয়েছে।

গ্রামে এবং সমাজে সামগ্রিকভাবে এই শিক্ষা স্বেচ্ছাসেবী/শিক্ষিকারা অনেক সম্মানিত হয়েছেন। এই উদ্ভাবনী অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমটি হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জীবন সত্যিই পাল্টে দিয়েছে। শিসক কেবল একটি শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচিই নয় বরং সামাজিক অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিরও একটি মাধ্যম।